বহুল আলোচিত সরাইল আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ হত্যা মামলার রায় দিয়েছে চট্টগ্রাম দ্রুত বিচার বিভাগীয় ট্রাইবুনাল- চারজনের ফাঁসি এবং সাতজনের যাবত জীবন কারাদন্ড দিয়েছে বিজ্ঞ আদালত।
এতে করে প্রায় ১২ বছর পর চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আদালতে চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার বিচার বিচার সম্পন্ন হল। দলীয় বিরোধে ২০১২ সালের ২১শে অক্টোবর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তিনি। এ ঘটনায় সরাইল আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি আবদুল হালিম, সাধারণ সম্পাদক মো. রফিক উদ্দিন ঠাকুর, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল জব্বার, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহফুজ আলী, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাফেজুল আসাদ সিজার, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ইসমত আলীসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত ইকবাল আজাদের ছোট ভাই এ কে এম জাহাঙ্গীর আজাদ। পুলিশের তদন্তে ঘটনার সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি আঁখিতারা গ্রামের মো. সাদেক মিয়াসহ আরও ৭ জনের সম্পৃক্ততা বেড়িয়ে আসে। চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলায় মোট ২৯ জনের বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ১৭ই ডিসেম্বর চার্জশিট দেয় পুলিশ।
পরবর্তীতে তাদের মধ্যে তৎকালীন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুল হালিম ও সহ-সভাপতি মো. সাদেক মিয়া মারা যান। ইকবাল আজাদের স্ত্রী সাবেক নারী সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম শিউলী জানান, হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম ৮ বছর স্থবির ছিল। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ২০১৩ সালের ৫ই মার্চ ইকবাল আজাদ হত্যা মামলা চট্টগ্রাম দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরিত হয়। ওই আদালতে ডাক্তারসহ মামলার ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষী বাকি থাকা অবস্থায় মামলার ১৩৫ কার্য দিবস শেষ হয়ে যায়। সে কারণে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের নিয়ম অনুসারে মামলাটি আবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ আদালতে ফেরত পাঠানো হয়। এরপর মামলাটি আবার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের জন্য ২০১৪ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে ক্রিমিনাল রিভিশন (নং-১৬২/২০১৪) করেন মামলার বাদী। এর প্রেক্ষিত হাইকোর্ট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর আদেশ দেয়। এই আদেশের বিরুদ্ধে আসামি পক্ষ হাইকোর্টের চেম্বার জজ আদালতে আপিল করে। এর পেক্ষিতে হাইকোর্টের আদেশটিকে স্টে (অবস্থান) করা হয়। আদেশে আরও বলা হয় হাইকোর্টে পূর্ণাঙ্গ শুনানি না হওয়া পর্যন্ত মামলাটি স্টে থাকবে। গত বছরের ১৫ই মে পূর্ণাঙ্গ শুনানির পর হাইকোর্ট এই হত্যা মামলার বিচারিক কার্যক্রম চট্টগ্রাম দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে চলতে কোনো বাধা নেই বলে আদেশ দেন। এই আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করলে ১৮ই মে সুপ্রিম কোর্টও অনুরূপ আদেশ বহাল রাখে। এদিকে মামলাটি আবার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ন্যাস্ত হওয়ার পর ২০২৩ সালের ১৫ই জুন মামলার আসামিদের ওই আদালতে হাজির হওয়ার আদেশ দেয়া হয়।
চট্টগ্রাম দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর অশোক কুমার দাস জানান- আজ বুধবার আদেশের দিন ধার্য করা হয়েছে। ইতিমধ্যে সাক্ষী-যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। মামলার ২৭ আসামির মধ্যে ২ জন মারা গেছেন। আর ৬ জন শুরু থেকেই পলাতক। সোমবার আদালতে উপস্থিত ১৯ আসামিকে জেলহাজতে পাঠানো হয় এবং ২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিয়েছেন আদালত।