চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে জনপ্রিয় আওয়ামী লীগ নেতার চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হয়েছে। আগামী বুধবার (৩ জুলাই) রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেছেন বিজ্ঞ আদালত।
সোমবার (১ জুলাই) বিচারক মোহাম্মদ হালিম উল্লাহ চৌধুরী যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করেন।
ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অশোক কুমার দাশ সিটি বুলেটিন প্রতিনিধিকে তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘এ মামলায় প্রথমে ২৯ জন আসামি ছিলেন। তাদের মধ্যে ২ জন মারা গেছেন, আর ৬ জন পলাতক আছেন। বাকি ২১ জনের মধ্যে দুইজন আজ যুক্তিতর্ক শুনানির সময় অনুপস্থিত ছিলেন। আসামিরা জামিনে ছিলেন। রায় ঘোষণা পর্যন্ত ১৯ জন আসামি জামিনের আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করে আদালত তাদেরকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। রাষ্ট্রপক্ষের মোট ১৬ জন সাক্ষ্য প্রদান করেন।
ইকবাল আজাদ সরাইল উপজেলার আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। ইকবাল আজাদের সহধর্মিনী উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম ওরফে শিউলি আজাদ বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের তিনজনের আংশিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত ৩১২ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের ২১ অক্টোবর দলীয় বিরোধে ব্রাহ্মনবাড়িয়া-২(সরাইল-আশুগঞ্জ) মনোনয়ন প্রত্যাশী,সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি জনপ্রিয় নেতা এ কে এম ইকবাল আজাদকে দিবালোকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় সরাইল আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারন সম্পাদক মো: রফিক উদ্দিন ঠাকুর,যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আবদুল জব্বার, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহফুজ আলী,উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক হাফেজুল আসাদ সিজার, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক ইসমত আলীসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত ইকবাল আজাদের ছোট ভাই এ কে এম জাহাঙ্গীর আজাদ। পুলিশের তদন্ত সাপেক্ষে আরো ৭ জনের সম্পৃক্ততা বেরিয়ে আসে। চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলায় মোট ২৯ জনের বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ১৭ই ডিসেম্বর চার্জশীট দেয় পুলিশ। মামলার চার্জশীটভূক্ত আসামীরা হচ্ছে কুট্টাপাড়া গ্রামের রফিক উদ্দিন ঠাকুর ও মাহফুজ আলী সৈয়দটুলা গ্রামের আবদুল জব্বার,সিরাজ, নয়াহাটি গ্রামের ইসমত আলী,ইদ্রিস আলী,মোকাররম হোসেন সোহেল,বাবু,কুট্টাপাড়ার হারিছ,নয়াহাটির বকুল,লিমন,আবদুল্লাহ সৈয়দটুলার শরিফ,মিজান,রাসেল,নিজ সরাইলের ইমদাদ,নয়াহাটির হাবিব,ইনু মিয়া সৈয়দটুলার মুছা মিয়া,নয়াহাটির জনি মিয়া,নয়ন মিয়া, আখিতারা গ্রামের মো: সাদেক মিয়া,ঝিলুকদার পাড়ার আরব আলী,অস্টগ্রামের ইঞ্জিনিয়ার মশিউর রহমান সৈয়দটুলার মিষ্টার আলী,আড়িয়ল গ্রামের মো: কামরুল ইসলাম।পরবর্তীতে তাদের মধ্যে তৎকালীন উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আবদুল হালিম ও সহ-সভাপতি মো: সাদেক মিয়া মারা যান।
২০১৩ সালের ৫ই মার্চ ইকবাল আজাদ হত্যা মামলা চট্টগ্রাম দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরিত হয়। ওই আদালতে ডাক্তারসহ মামলার ১৪জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য গ্রহন করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তার স্বাক্ষী বাকী থাকা অবস্থায় মামলার ১৩৫ কার্য দিবস শেষ হয়ে যায়। সেকারনে দ্রুুত বিচার ট্রাইব্যুনালের নিয়ম অনুসারে মামলাটি আবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ আদালতে ফেরত পাঠানো হয়। এরপর মামলাটি আবার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের জন্যে ২০১৪ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারী হাইকোর্টে ক্রিমিনাল রিভিশন (নং- ১৬২/ ২০১৪) করেন মামলার বাদী । এর প্রেক্ষিত হাইকোর্ট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর আদেশ দেয়।