৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, সোমবার ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২৯ পূর্বাহ্ণ
শিরোনাম

অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ লাকী

এহসানুল হক | citybuletin.com
প্রকাশ: ১৬১৯ ঘণ্টা, মঙ্গলবার ২৫ জুন ২০২৪ || সর্বশেষ সম্পাদনা: ১৬৩৬ ঘণ্টা, মঙ্গলবার ২৫ জুন ২০২৪


অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন  রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ লাকী - জাতীয়

গাজীপুরে ১০০ বিঘা জমির ওপর আপন ভুবন নামে একটি রিসোর্ট গড়ে তুলেছেন।গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি ও উত্তরাসহ রাজধানী ঢাকার অভিজাত এলাকায় বাড়িঘর, ফ্ল্যাটসহ দেশে-বিদেশে ছেলে ও মেয়ের নামে একাধিক বাড়ি-গাড়ি ও শত শত বিঘা জমি ক্রয় করেছেন । মেয়ের নামে কানাডায় রয়েছে বিলাসবহুল বাড়ি।

এলাকাবাসী বলছেন,মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে চিহ্নিত রাজাকার ময়দর আলী দারোগার নাতনি হলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকী।

 

রায়পুরা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধার সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ময়দর আলী দারোগা ছিল তৎকালীন চিহ্নিত রাজাকার। এটা সবাই জানে। রাজাকার ও বিএনপি পরিবারের সন্তান হয়ে কীভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন এবং এত সম্পদের মালিক বনে যান।

এ যেন রূপকথার গল্প।সরকারি কলেজের একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হয়ে কীভাবে তিনি এত সম্পদের মালিক বনে গেলেন- এ নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

 

লায়লা কানিজের বাবা কফিল উদ্দিন আহম্মদ ছিলেন একজন খাদ্য কর্মকর্তা। তার চার মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে লায়লা কানিজ সবার বড়। তার ঘরে রয়েছে দুই সন্তান। একজন তৌফিকুর রহমান অর্ণব এবং অপরজন ফারজানা রহমান ইপসিতা।

 

 

 

রাজাকারের নাতনি লাকীদের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল।লায়লা কানিজ লাকী ছিলেন রাজধানীর তিতুমীর সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। ২০১৮ সালে তার পরিচয় হয় স্থানীয় সংসদ সদস্য রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর সঙ্গে। ২০২৩ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান সাদেকুর রহমান মারা গেলে স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে উপনির্বাচনে প্রার্থী হন এবং সংসদ সদস্যের প্রভাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হন লায়লা কানিজ।

 

জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির তিনি দুর্যোগ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক।শিক্ষক থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া লায়লা কানিজ বর্তমানে অঢেল সম্পদের মালিক। নামে-বেনামে দেশ-বিদেশে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। তার নির্বাচনি হলফনামা থেকে জানা গেছে, তার বাৎসরিক আয় বাড়ি-অ্যাপার্টমেন্ট-দোকান ও অন্যান্য ভাড়া থেকে ৯ লাখ ৯০ হাজার, কৃষি খাত থেকে ১৮ লাখ, শেয়ার-সঞ্চয়পত্র-ব্যাংক আমানতের লভ্যাংশ থেকে ৩ লাখ ৮২ হাজার ৫০০, উপজেলা চেয়ারম্যানের সম্মানী বাবদ ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৭৫, ব্যাংক সুদ থেকে ১ লাখ ১৮ হাজার ৯৩৯ টাকা। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার জমা রয়েছে ৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। তার কৃষিজমির পরিমাণ ১৫৪ শতাংশ, অকৃষিজমির মধ্যে রয়েছে রাজউকে পাঁচ কাঠা, সাভারে সাড়ে ৮ কাঠা, গাজীপুরে ৫ কাঠা, গাজীপুরের পুবাইলে ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ ও ২ দশমিক ৯০ শতাংশ, গাজীপুরের খিলগাঁওয়ে ৫ শতাংশ ও ৩৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ, গাজীপুরের বাহাদুরপুরে ২৭ শতাংশ, গাজীপুরের মেঘদুবীতে ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ, গাজীপুরের ধোপাপাড়ায় ১৭ শতাংশ, রায়পুরায় ৩৫ শতাংশ, ৩৫ শতাংশ ও ৩৩ শতাংশ, রায়পুরার মরজালে ১৩৩ শতাংশ, সোয়া ৫ শতাংশ, ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ২৬ দশমিক ২৫ শতাংশ ও ৪৫ শতাংশ, শিবপুরে ২৭ শতাংশ ও ১৬ দশমিক ১৮ শতাংশ, শিবপুরের যোশরে সাড়ে ৪৪ শতাংশ, নাটোরের সিংড়ায় ১ একর ৬৬ শতাংশ। এ ছাড়া গাজীপুরে ১০০ বিঘা জমির ওপর আপন ভুবন নামে একটি রিসোর্ট রয়েছে। তার মেয়ে ফারজানা ইসপিতার নামে মরজাল বাসস্ট্যান্ড ও আশপাশ এলাকায় ১০ বিঘা জমি রয়েছে। এ ছাড়া ছেলে আহম্মদ তৌফিক অনুদের নামে কমপক্ষে ৫০ বিঘা জমি রয়েছে। ময়মংসিংহের ভালুকায় রয়েছে জুতার কারখানা। নাটোরের সিংরায় ২০ বিঘা জমি, গাজীপুরের পুবাইলে একাধিক রিসোর্টসহ বিস্তৃত পরিমাণ জমি রয়েছে।

 

মরজালে নিজ এলাকায় প্রায় দেড় একর জমিতে ‘ওয়ান্ডার পার্ক ও ইকো রিসোর্ট’ নামের একটি বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তুলেছেন লায়লা কানিজ, পার্কটির মালিকানা তাঁর দুই সন্তান তৌফিকুর রহমান (অর্ণব) ও ফারজানা রহমানের (ইপ্সিতা) নামে। ভেতরের প্রায় তিন বিঘা আয়তনের লেকটি লায়লা কানিজের ‘লাকি মৎস্য খামার’ নামে নিবন্ধিত।

 

নাম না প্রকাশের শর্তে উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, শিক্ষকতার আয়ে তার এত সম্পদ থাকার কথা নয়। শুধুমাত্র অবৈধ টাকার জোরেই লায়লা কানিজ লাকী রায়পুরার রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। 

 

রায়পুরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফজাল হোসাইন বলেন,

 

এমপি সাহেবের উৎসাহেই রাজনীতিতে এসেছেন লায়লা কানিজ। তিনি একটা টাকার পাহাড়। স্বামীর অবৈধ টাকার প্রভাবেই এমপি সাহেব তাঁকে উপজেলা চেয়ারম্যান বানিয়েছেন। তাঁকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের খুব বড় ক্ষতি করে ফেলেছেন সংসদ সদস্য রাজিউদ্দীন আহমেদ।’

 

রাজাকার ও বিএনপি পরিবারের সন্তান হয়ে কীভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন এবং এত সম্পদের মালিক বনে যান। এলাকায় কেউ তার ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পায় না।

 

লায়লা কানিজকে জনসমক্ষে দেখা যাচ্ছে না। তিনি কার্যালয়ে আসছেন না, বাড়িতেও নেই। মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যাচ্ছে না

সিটিবুলেটিন.কমে প্রকাশিত যে কোনও প্রতিবেদন, ছবি, লেখা, রেখাচিত্র, ভিডিও-অডিও ক্লিপ অনুমতি ছাড়া অন্য কোনও মাধ্যমে প্রকাশ, প্রচার করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।
আপনার মন্তব্য
এই বিভাগের সর্বোচ্চ পঠিত