উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের জের ধরে শ্যালক লুৎফুল হাবিব রুবেলের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণ ও নির্যাতনের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
তিনি বলেন, ‘পুলিশ নিরপেক্ষভাবে ও সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্তভাবেই এই মামলার তদন্ত করছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তে এ ঘটনায় জড়িত হিসেবে যাদেরই নাম পাওয়া যাবে বা যারাই দোষী সাব্যস্ত হবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কে আমার ভাই, কে আমার শ্বশুর, কে আমার ভাগনে, কে আমার ভাতিজা কিংবা শ্যালক— এগুলো কোনো বিবেচনার বিষয় নয়। এটা নিয়ে আমি আসলেই বিব্রত, লজ্জিত, দুঃখিত এবং আমি ক্ষমাপ্রার্থী। তাই এখানে মন্ত্রীর (পলক) আত্মীয়-স্বজন বলে কেউ ছাড় পাবে না।’
শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কলম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য ভুক্তভোগী দেলোয়ার হোসেনকে দেখতে গিয়েছিলেন প্রতিমন্ত্রী পলক। সেখানেই সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, দেলোয়ার হোসেনের ওপর হামলার ঘটনায় যারা দোষী, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক, আইনি ও সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা কঠোর অবস্থানে আছি। সে ক্ষেত্রে কার কী পরিচয়, কে আমার ভাই, কে আমার শ্বশুর কিংবা শ্যালক— এটা কোনো বিবেচনার বিষয় নয়। এটা নিয়ে আমি আসলেই বিব্রত, লজ্জিত, দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী। বিবেকের তাড়নায় আমার মনে হয়েছে, এখানে আসা দরকার এবং স্পষ্ট বার্তা সবাইকে জানিয়ে দেওয়া দরকার। এ ঘটনায় জড়িত আমার আত্মীয় কিংবা যেই হোক, এটা ব্যবহার করে কোনো বাড়তি সুবিধা পাওয়ার সুযোগ নেই।
বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে এসেছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, ‘উনি সরাসরি বিষয়টি তত্ত্বাবধান করছেন। ওনার কঠোর নির্দেশনাও রয়েছে। যারা এই হামলায় জড়িত, তারা যারাই হোক, পরিচয় যাই হোক, তাদের বিরুদ্ধে যেন কঠোর আইন প্রয়োগ করা হয়। এরই মধ্যে দুজন গ্রেফতার হয়েছেন। আরও বাকি যারা জড়িত, তাদের ব্যাপারে অনুসন্ধান ও তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। আহত দেলোয়ার হোসেন পাশা ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য আমি দেশের বাইরে থেকেই হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে কথা বলেছি।’
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গেও কথা বলেছি। আমাদের আওয়ামী লীগের উপজেলা বা পৌর শাখার কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে যেন সাংগঠনিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যারা অন্য সহযোগী সংগঠনের আছে, তাদেরও যেন বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়। আমি নৌকার বিজয়ী সংসদ সদস্য ও সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে মনে করেছি, এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমেই আমরা এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই, যেন আর কেউ কারও পরিচয় বহন করে আমাদের দল ও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার দুঃসাহস করতে না পারে।’
আগামী ৮ মে নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। সেখানে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী ও নাটোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবিব রুবেল। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন গত ১৫ এপ্রিল জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে থেকে আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী ও আওয়ামী লীগ সদস্য দেলোয়ার হোসেনকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায় একদল লোক। নির্যাতনের পর বিকেলে একটি মাইক্রোবাসে তুলে তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
পরে দেলোয়ারকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই রাতেই তাকে রামেক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। পরে শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে তাকে হাসপাতালের সাধারণ ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে।
এর আগে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময়ও লুৎফুল হাবিব রুবেলের সঙ্গে নির্বাচন না করার জন্য ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের স্থানীয় নেতা আসাদুজ্জামানকে তুলে নিয়ে গিয়ে প্রায় ছয় ঘণ্টা বালু পয়েন্টে আটকে রাখা হয়েছিল। তাই আসাদুজ্জামান মনোনয়ন জমা দেননি। রুবেল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
প্রতিমন্ত্রীর প্রভাবেই তার শ্যালক রুবেল এমন বেপরোয়া কাণ্ড ঘটিয়ে যাচ্ছেন কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে পলক বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময় কী ঘটেছিল তা আমি জানি না। এবার কেন্দ্র থেকে আমাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এবার যেন দলীয় প্রার্থী না দেওয়া হয় এবং কোনো এমপি-মন্ত্রী যেন কোনো প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান না নেন। যে প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তার সঙ্গে আমার আত্মীয়তার সম্পর্ক। সেটা তো আমি অস্বীকার করতে পারব না। তবে নাটোরের সিংড়ার রাজনীতিতে আমি কখনোই ব্যক্তিগত আত্মীয় বা গোষ্ঠী বা ব্যক্তিকে প্রশ্রয় দেওয়ার চেষ্টা করিনি।’
এই অপহরণ ও নির্যাতনের সঙ্গে শ্যালক রুবেলের নাম ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে বলা হলেও মামলায় আসামি হিসেবে তার নাম না থাকার বিষয়টি সাংবাদিকরা জানতে চাইলে জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘যিনি হামলার শিকার, তার আপন ভাই মামলার বাদী। তার সঙ্গে আমার দল বা ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করা হয়নি। বাধা দেওয়া হয়নি। তারা মামলা করেছেন। পুলিশ মামলা তদন্ত করছে। কারা জড়িত, আপনারা দেখেছেন। আদালতে দুজন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণ, ভিডিও ফুটেজ সবই আছে। যারাই ঘটনায় জড়িত থাকুক, পুলিশ প্রভাবমুক্ত-নিরপেক্ষভাবে ব্যবস্থা নেবে। আমরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই।
এ সময় প্রতিমন্ত্রী পলকের সঙ্গে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়াার জেনারেল এ এফ এম শামীম আহম্মদ, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক এবং সিংড়া আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীরা ছিলেন।