হরতালের নামে নিরাপত্তা বিঘ্নিত করলে পুলিশ আইনানুগভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান। ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আজ শনিবার রাত সাড়ে ১০টায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই সতর্কবার্তা দেন।
হাবিবুর রহমান বলেন, হরতাল একটি গণতান্ত্রিক অধিকার। ঠিক তেমনি হরতাল পালন না করাও জনগণের একটি অধিকার। হরতালের নামে অনেক ধরনের নৈরাজ্য চালানো হয়ে থাকে। আগামীকাল (রোববার) একটি দল হরতাল আহ্বান করেছে। হরতালের নামে কেউ যদি মানুষের স্বাধীন চলাফেরায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করে, মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার চেষ্টা করে, তাহলে পুলিশ আইনানুগভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
শান্তিপূর্ণ সমাবেশের প্রতিশ্রুতি দিয়েও বিএনপি পূর্ব পরিকল্পিতভাবে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে বলে অভিযোগ করেন ডিএমপি কমিশনার। তিনি বলেন, ‘আইন অমান্যকারীদের ধিক্কার জানাচ্ছি। যেসব পুলিশ সদস্য পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিহত, আহত হয়েছেন, তাদের ও তাদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। ভবিষ্যতে এ ধরনের দুষ্কর্ম ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যাতে সংগঠিত হতে না পারে, সে জন্য সর্বশক্তি দিয়ে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সংঘর্ষের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আজ পল্টন এবং আশপাশের এলাকায় বিএনপিসহ আরও কয়েকটি দলের সমাবেশ ছিল। অনুমতি নেওয়ার সময় বিএনপি নেতারা নিজেরাই উল্লেখ করেন যে বিজয়নগর মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত তারা ১ লাখ ২০ হাজার লোকের জমায়েত করবেন। তাদের সমাবেশ যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, কোনো ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড যাতে চালাতে না পারে সে জন্য ডিএমপি এবং অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সার্বিক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা সকাল ১০টা থেকেই হামলা চালানো শুরু করে বলে জানান ঢাকার পুলিশ প্রধান হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, কাকরাইল মসজিদের মোড় এবং তার আশপাশের স্থানে অসংখ্য বিএনপির নেতা-কর্মী অবস্থান নিয়ে বিনা কারণে বাস ও বিভিন্ন যানবাহনে হামলা শুরু করে। কিছুক্ষণ পরেই অতর্কিতভাবে তারা বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা করে এবং ফটক ভেঙে ফেলে। একপর্যায়ে তারা লাঠিসোঁটা হাতে বাসভবনের ভেতরে ঢুকে পড়ে।
তাণ্ডবলীলার একপর্যায়ে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ধ্বংসযজ্ঞের বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত ও ধারণাতীত ছিল। পুলিশ আক্রমণকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার একপর্যায়ে দুষ্কৃতকারীরা কাকরাইল মোড় থেকে নাইটিঙ্গেল মোড় পর্যন্ত বেশ কিছু যানবাহন জ্বালিয়ে দেয়। এ সময় ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের ভবনে আগুন দেয়। তখন তারা রাস্তায় দুজন পুলিশ সদস্যকে নির্মমভাবে প্রহার করে।
ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, একপর্যায়ে তারা রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে হামলা চালায়। ভেতরে ঢুকে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। একটি আইসিইউ সুবিধা সংবলিত অ্যাম্বুলেন্সসহ ২৬টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। তারা শান্তিনগরে কর্ণফুলী গার্ডেন সিটির পেছনের রমনা ডিসি ট্রাফিক কার্যালয় ও অনেকগুলো দোকান ভাঙচুরের পাশাপাশি অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করে। রাজারবাগ পুলিশ লাইনের সামনে অবস্থিত রাস্তা থেকে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে এবং ভেতরে বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ভাঙচুর চালায়।
ফকিরাপুলের বক্স কালভার্ট এলাকায় পুলিশ সদস্যদের বেধড়ক পেটায় এবং একজন পুলিশকে গুরুতর পিটিয়ে এবং চাপাতি দিয়ে আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। মৃত্যু নিশ্চিতের পরও ন্যক্কারজনকভাবে মৃতদেহে বারবার লাথি মারতে থাকে। পল্টন থানাতেও আক্রমণের চেষ্টা চালায় এবং ওই সব এলাকায় সব কটি ট্রাফিক পুলিশ বক্সে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এ ছাড়া অসংখ্য বাস, প্রাইভেট কারে আগুন দেয়।
তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে এই ধ্বংসযজ্ঞ চলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ পুলিশের চরম ধৈর্য ও সাহসিকতার সঙ্গে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করে। আক্রমণকারীদের ছত্র ভঙ্গ করার চেষ্টা করে। এতে শতাধিক পুলিশ সদস্য আহত হয়। কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।’